
প্রকাশিত: Sat, Dec 31, 2022 3:46 PM আপডেট: Mon, May 12, 2025 6:58 AM
সাধারণ মানুষ কি মেট্রো রেল ব্যবহার করতে পারবে?
মনজুরুল হক
দেশে বেসরকারিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠি ‘পরিবহন মালিক সমিতি’। তারা যে শুধু জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তাই নয়, তারা সরকারকেও জিম্মি করতে পারে। আকসার করেও। ‘ইচ্ছাÑভোটে’ ক্ষমতাসীন মহা প্রতাপশালী সরকারও তাদের কাছে অসহায়। তাদের সীমাহীন লোভের বলি হয়ে বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু এই সমাজ, দেশ মেনে নিয়েছে।
[১] সরকার, আমলাগোষ্ঠি আর সরকারের সমর্থকরা মনে করেছিলেন। মেট্রোরেল, বিআরটি, এমআরটি, এক্সপ্রেস হাইওয়ে এসব চালু হলে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সর্বত্র অসহনীয় যানজট কমবে। তারা যেটা বুঝতে পারেননি সেটা হলো পরিবহন মাফিয়াদের কন্ট্রোল করতে না পারলে এদেশের পরিবহন সেক্টরে কিচ্ছু হবে না। হাজার হাজার কোটি টাকা রাস্তায় গড়াবে, যানজট আরও বাড়বে, জনগণের দুর্ভোগ আরও সীমাহীন হবে। হয়েছে। হচ্ছে। হবেও।
[২] অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশের মেট্রোর নির্মাণ ব্যয় তিন গুণ হওয়া নিয়ে আলাপ নেই, কারণ এদেশে এইসব নির্মাণ যে জনগণের টাকায় হয় সেটাই জনগণ জানে না। জনগণ এটাও বোঝে না কোনো মহামহিম ব্যক্তি, তাঁর স্বপ্ন বা তাঁর সরকার এসব দয়া করে দিচ্ছে না। এগুলো যুগের চাহিদা। রুলস অব ডেভেলপমেন্ট। বরং যে পশ্চিমবঙ্গকে আমাদের দেশে ‘পিছিয়ে পড়া রাজ্য’ বলে কটাক্ষ করা হয় তাদের চেয়ে ৩৮ বছর পরে কেন হলো সেটা প্রশ্ন করতে হবে। যা হোক, মেট্রোরেল বা এ ধরনের মেগা প্রজেক্টের শিলান্যাসের সময়তেই লাভের ভাগ আলাদা করে রাখা হয়। সেটা বছর বছর ইনফ্লাশনের দোহাই দিয়ে বাড়ে। তো সেই চুরির টাকা যে আমাদের টাকা, সেটাও যখন আমরা বুঝি না তখন চুরি নিয়ে আলাপ নেই।
[৩] প্রশ্ন হলো আংশিক মেট্রোরেল চালু হলেও পরিবহন সংকট কমবে না কেন? সহজ হিসাব: মেট্রোর ভাড়া বাসের ভাড়ার চেয়ে কম বা সমতুল্য হলেই বাস মালিকদের একচেটিয়া শোষণ কমত। তা হয়নি। কেন হয়নি? বেশি ভাড়া আদায় করে দ্রুত খরচ তুলে আনার জন্য? না। ভাড়া কম রাখা হয়নি বাস মালিকদের মুনাফার কথা বিবেচনা করে। একজন যাত্রী প্রথম প্রথম অ্যডভেঞ্চার-উত্তেজনায় ১০০ টাকা দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল আসবেন। তারপর আর পারবেন না। বাসে ৬০ টাকা দিয়ে আসবেন। এখন আপনি দৈনিক ৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করবেন? যাত্রী পেলে তো?
[৪] মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা। প্রতি কিলো ৫ টাকা হারে। উত্তরা থেকে মতিঝিল ২০ কিলোমিটার যেতে ১০০ টাকা এবং আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোর মত ভাড়া ৬০ টাকা। এর পাশে ভাবুন ঢাকায় প্রতি কিলো বাস ভাড়া ২ টাকা ৪৫ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। মেট্রোরেলের ভাড়া বাসের দ্বিগুণ রাখার প্রধান কারণ তো উপরে বলেছি, এবার দ্বিতীয় কারণ এটা শুধু সামর্থ্যবান শ্রেণির বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সাধারণ মানুষ মেট্রো ব্যবহার করতে পারবে না। তাঁর উপর আছে টিকিট কাটার জটিলতা। ফলে যানজট কমানোর উদ্দেশ্য প্রথমেই মুখ থুবড়ে পড়বে। আর বাস মালিকদের একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব করা? সেটা তো প্রশাসন করতে চায় না।
[৫] নির্মাণ ব্যয় নিয়ে আলাপ নাই আগেই বলেছি। এবার কলকতার মেট্রোর ভাড়ার তালিকা দেখুন-কলকাতায় মেট্রোরেলের ভাড়া বাস ভাড়ার চেয়ে কম। সেখানে মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ৬ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩১ টাকা। ৬ টাকা দিয়ে ২ কিলোমিটার, ১২ টাকা দিয়ে ২ থেকে ৫ কিলোমিটার, ১৯ টাকা দিয়ে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার, ২৫ টাকা দিয়ে ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার যাওয়া যায়। ২০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ৩১ টাকা লাগে। নয়াদিল্লিতে ২০ কিলো যেতে ৫০ টাকা। লাহোরে ২৭ কিলো যেত সর্বোচ্চ ভাড়া ১৮ টাকা।
[৬] পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যেভাবে ‘দক্ষিণের দুয়ার অবারিত.. হাতের নাগালে কুয়াকাটা-সুন্দরবন, আড়াই ঘন্টায় বরিশাল’ বলে কবিতা আবৃত্তি হয়েছিল সেটা কি হয়েছে? বাস মালিকদের হুমকিতে মোটর বাইক পারাপার নিষিদ্ধ। বলা হয়েছিল এই নিষদ্ধকরণ সাময়ীক, কিন্তু সেই ঈদের পর আবার ঈদ চলে আসল, বাইক কী চলতে দেওয়া হয়? অথচ নিয়ম কী? দেশের টাকায় দেশের সম্পদের উপর দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার থাকতে হবে। অযান্ত্রিক যানবাহন ছাড়া সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলতে দিতে হবে। এমনকি ট্যাঙ্কও। আজকে একটা ক্যান্টনমেন্ট ‘মুভ’ করলে ট্যাঙ্কও চলবে। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাস মালিকদের মৌসুমী লাভের অংশ কমে যাবার কষ্টে সরকার বাইক বন্ধ করে দিল।
[৭] সেই একই ঘটনা মেট্রোরেলের বেলাতেও হলো। এবার আপনি সাশ্রয়-ট্রাশ্রয় ভুলে গিয়ে দর্শনীয় বস্তু হিসাবে মেট্রোতে চাপতেই পারেন বউ-বাচ্চা নিয়ে। কিন্তু যানজট নিরসন, গণপরিবনের সংকট দূর, রাজধানীকে আধুনিকীকরণÑ এইসব ছেদো কথা জাস্ট কথার কথা। বলতে হয় তাই বলা, কারণ তাতে ট্যাক্সো লাগে না। লেখক ও ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
